

ঘৃতকুমারী
ঘৃতকুমারী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ঘৃতকুমারী পাতার
রস যকৃতের জন্য উপকারী। বাংলায় নাম তরুণী ঔষধি গাছ হিসাবে এর অনেক কদর। তবে বাংলার
মানুষ একে ঘৃতকুমারী নামেই বেশী চিনে। এর আর একটি নাম আছে তা হলো কুমারী । এর
বৈজ্ঞানিক নাম Aloe vera এটি Asphodelaceae (Aloe family) পরিবারের একটি উদ্ভিদ। অন্যান্য
নামের মধ্যে Aloe vera, Medicinal aloe, Burn plant Hindi:
Gheekumari উল্লেখযোগ্য। ঘৃতকুমারী বহুজীবি ভেষজ উদ্ভিদ
এবং দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মত। এর পাতাগুলি পুরু, দুধারে
করাতের মত কাঁটা এবং ভেতরে লালার মত পিচ্ছিল শাঁস থাকে। সবরকম জমিতেই ঘৃতকুমারী
চাষ সম্ভব তবে দোঁয়াস ও অল্প বালি মিশ্রিত মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় নিয়মিত
জলসেচের দরকার হলেও গাছের গোড়ায় যাতে জল থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণতঃ
শেকড় থেকে বেরনো ডাল বা ‘সাকার’-এর সাহায্যে এই গাছের বংশবৃদ্ধি হয়। এই
ঘৃতকুমারীতে রয়ছে ২০ রকমের খনিজ। মানবদেহের জন্য যে ২২টা এমিনো এসিড প্রয়োজন তার
৮ টি এতে বিদ্যমান। এছাড়াও ভিটামিন A, B1,
B2, B6, B12,
C এবং E রয়েছে।
“ঘৃতকুমারী বা তরুণী ঔষধি গাছের পাতার রস
যকৃতের জন্য উপকারী” রোগ সারানোর জন্য তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ
ঘৃতকুমারী ব্যবহার করে আসছে। বিজ্ঞানের এ যুগেও এর কদর মোটেও কমেনি, বরং বেড়েছে। বাড়িতে তো বটেই, অনেকের বাগানেও
পাওয়া যায় এ উপকারী উদ্ভিদ। ত্বকের সজীবতা বজায় রাখতে আক্ষরিক অর্থেই এর তুলনা
নেই। এর মধ্যে আছে আর্দ্রতা প্রদানকারী উপাদান, যা ব্যবহার
করলে শুকিয়ে যাওয়া ত্বকে আর্দ্রতা ফিরে আসে। ত্বকের মৃত কোষকে নরম করে সেগুলো
একেবারে দূর করে; সহায়তা করে ত্বককে স্বাভাবিক অবস্থায়
রাখতে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের গুণাগুণ থাকায় কোষ নির্মাণ করে ত্বকের সৌন্দর্য ও
উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটে ত্বকেরও। একটু বুড়ো
বুড়ো লাগে। কিন্তু নিয়মিত ঘৃতকুমারী ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন
এতটাই ধীরে ঘটে যে, বলতে গেলে তা চোখেই পড়ে না। মনে হয়
থেমে গেছে বয়স। এছাড়া কাটা গেলে বা আঘাতের কারণে টিস্যু যদি ছিঁড়ে যায়, তাহলে তার পুনর্গঠনেও ঘৃতকুমারীর বিকল্প খুঁজে পাওয়া দায়।
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর রসের কয়েকটি গুণের
কথা হজমি সহায়ক নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস পানে পরিপাক প্রক্রিয়া সহজ হয়। ফলে দেহের
পরিপাকতন্ত্র সতেজ থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাছাড়া ডায়েরিয়া সারাতেও
ঘৃতকুমারীর রস দারুণ কাজ করে।
শক্তিবর্ধক আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায়
এমন কিছু উপাদান থাকে যা দেহে ক্লান্তি ও শ্রান্তি আনে। কিন্তু নিয়মিত ঘৃতকুমারীর
রস সেবন শরীরের শক্তি যোগানসহ ওজনকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় যারা দীর্ঘকাল
ফিব্রোমিয়ালজিয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর রস দারুণ কাজ
করে। এটি দেহে সাদা ব্লাড সেল গঠন করে যা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে।
ক্ষতিকর পদার্থের অপসারণ দেহ থেকে ক্ষতিকর
পদার্থ অপসারণে ঘৃতকুমারীর রস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ঔষধির কাজ করে। আমরা
প্রতিনিয়ত বিভিন্ন চাপে থাকি। এছাড়া চারপাশের দূষিত পরিবেশ এবং বিভিন্ন ফাস্টফুড
গ্রহণের কারণে নিয়মিত পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার করা দরকার। ঘৃতকুমারীর রস সেবনের ফলে
শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের মিশ্রণ ও খনিজ পদার্থ তৈরি হয় যা আমাদেরকে চাপমুক্ত
রাখতে এবং শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
প্রদাহ কমায় ঘৃতকুমারীর রস হাড়ের সন্ধিকে
সহজ করে এবং দেহে নতুন কোষ তৈরি করে। এছাড়া হাড় ও মাংশপেশির জোড়াগুলোকে
শক্তিশালী করে। সেইসঙ্গে শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ প্রশমনেও কাজ করে।
ঘৃতকুমারী পাতার রস , শসা ও মধু ঘৃতকুমারী পাতার রস বিষাক্ত উপাদানের প্রতি বিশেষ ভুমিকা
পালন করতে পারে । এ জন্য চেহারা মেচেতার ওপর কিছু ঘৃতকুমারী পাতার রস রেখে দেয়,
চেহারার ত্বকের নরম হবে এবং কিছু ক্ষতচিহ্ন দেখা যায় না । যদি
আপনার মুখের মেচেতা খুব গুরুতর , তাহলে ঘৃতকুমারী পাতার
রস পানির সঙ্গে মিশিয়ে খান, প্রতিদিন দু’বার ,প্রত্যেকবার ১০ মিলিলিটার ,কার্যকরভাবে মেচেতা
প্রতিরোধ করা যায় । ঘৃতকুমারীর একটি পাতা, মধু এ একটি
ছোট শসা ছোট করে মিশিয়ে করে মাস্ক করে এবং মেচেতার ওপর রেখে দেন, চামরার ফুস্কুড়িও প্রতিরোধ করতে পারে । উল্লেখ যে, নারীদের মুখে যদি মেচেতা থাকে, তাহলে মেক-আপ
না করা ভালো । কারণ যেসব মেক-আপ ক্রিম ত্বকের সূক্ষ্মরন্ধ্রের স্বাভাবিক রূপান্তর
বাধা দেবে এবং মুখের মেচেতা গুরুতর হবে ।
ঘৃতকুমারীতে রয়েছে রেজিন, স্টেরলট্রাইটর পেনস, কুডমারিনস,স্যাপোনিনস, কার্বোহাইড্রেটডস, এমিনোএসিড ও ভিটামিন যা ওষুধ প্রস্তুতে মুল্যবান উপাদান ঘৃতকুমারী ।
এ্যালোভেরা, নামে বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রীতে ব্যবহার করা
হয়। এর কাজ হচ্ছে ত্বকের লাবন্যতা রা করা ও চুলের পুষ্টি যোগান দেওয়া। এছাড়া গরমে
প্রশান্তি দেয়া, পীহা, যকৃত,
কৃমি, বাত সহ বহু রোগ ও ুধামন্দা,
বদহজম এবং বারতি মেদ দুর করতে এর তুলনা নেই। ঘৃতকুমারী থেকে তৈরী
অ্যালোমিল্কিম হওয়ার এক মহৌষধ। ওষুধি গুনাগুন ছাড়াও ঘৃতকুমারী এখন ড্রইংরুমের
সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ উদ্ভিদের নিঃসৃত অক্সিজেনের পরিমাণ
অপোকৃত বেশি আর তাই ড্রইংরুমের পরিবেশ করে নির্মল। ঘৃতকুমারী বিভিন্ন নামে আমাদের
দেশে পরিচিত যেমন আয়ুর্বেদীক নাম ঘৃত কাঞ্চন, তরুনীলতা।
ইউনানী নাম ঘিকোয়ার, সুবারা। এ ব্যাপরে বরিশাল অমৃতলাল
আয়ুর্বেদ ও ইউনানী মহা বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল ননী গোপাল সীল জানান ঘৃত কুমারীর
গুনের কথা বলে শেষ করা যাবেনা তবে এর পরিকল্পিত আবাদ গরে তুলতে পারলে আমারা লাভবান
হবো। ভারতের প্রাত কবিরাজ জি এম চৌধুরী বলেন ঘৃতকুমারীর গুনাগুন সম্পর্কে বেশী
বলার দরকার নেই একথায় বলা যায় যে সর্বরোগের মহাষৌধ ঘৃতকুমারী এটা শরীরের ভীতরে
যেমন কাজ করে তেমনি শরীরের উপরে ও ত্বক লাবন্যের রুপ চর্জায় বিশেষ কাজ করে।
No comments :
Post a Comment