https://www.facebook.com/oushudhibagan

CLOVE

লবঙ্গ
লবঙ্গের উপকারিতা
গরম মসলায় দারুচিনি ও এলাচের সাথে আরও একটি উল্লেখযোগ্য উপকরণ হচ্ছে লং বা লবঙ্গ। খুসখুসে কাশি ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে লবঙ্গের উপকারিতা সবাই জানে। কিন্তু লবঙ্গ ভিতরে ভিতরে শরীরের আরও দীর্ঘস্থায়ী কিছু সমস্যার সমাধান করে আসছে তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই।
হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
হজমে সহায়তা করে এমন এনজাইম নিঃসরণের মাদ্ধমে লবঙ্গ আমাদের হজম ক্ষমতা সক্রিয় করে তোলে। এরা ফ্লাটুলেন্স, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, ডিসপেপসিয়া এবং নসিয়া কমাতে সাহায্য করে। লবঙ্গের উপকারিতা আরও ভালভাবে পেতে এটি পিষে, ভেঁজে, গুঁড়া করে বা মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান
লং এর মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিকারসিনোজেনিক, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়া, অ্যান্টিইনফ্লেমেটোরি, হেপাটো-প্রোটেক্টিভ সহ আরো অনেক বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান পাওয়া যায়। কলেরা, যকৃতের সমস্যা, ক্যান্সার, শরীরে ব্যথা ইত্যাদি থেকে শরীরকে রক্ষা করতে লবঙ্গের উপকারিতা অনেক।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লবঙ্গের উপকারিতা।
ডায়াবেটিসে আক্রন্ত ব্যক্তির শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরি হতে পারেনা। গবেষণায় পাওয়া গেছে যে লং এর রস শরীরের ভেতরে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে; রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে লবঙ্গের উপকারিতা অপরিসীম।
মুখের রোগ সারিয়ে তুলতে লবঙ্গের উপকারিতা।
মাড়ির সমস্যা, যেমনঃ জিনজিভাইটিস ও পেরিওডনটাইটিস প্রতিরোধে লবঙ্গের উপকারিতা অপরিসীম। লং এর মুকুল (মাথার অংশ) ওরাল প্যাথোজেনের বৃদ্ধি রোধ করে আপনার মুখটিকে সকল রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। মাড়ির ক্ষয় বা দাঁতের ব্যথা রোধেও এরা সাহায্য করে।
মাথা ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করে।
মাথা ব্যথা কমাতে লবঙ্গের উপকারিতা অপরিসীম। কয়েকটি লং এবং খনিজ লবনের গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এক গ্লাস দুধের ভেতর এই পেস্ট মিশিয়ে পান করুন।
পুষ্টি উপাদান
ন্যাশনাল নিউট্রিয়েন্ট ডাটাবেজ ফর স্ট্যান্ডার্ড রেফারেন্স এর গবেষণা অনুযায়ী ১০০ গ্রাম লং এর মধ্যে ৬৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৩ গ্রাম লিপিড, ২ গ্রাম সুগার, ২৭৪ কিলোক্যালরি এবং ৩৩ গ্রাম খাদ্য আঁশ থাকে। এছাড়াও মিনারেলের মধ্যে থাকে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং জিংক। আরো থাকে থিয়ামিন, রিবোফ্লেভিন, নিয়াসিন, ফোলেট, ভিটামিন সি, বি৬, বি১২, , , ডি এবং ভিটামিন কে। নিয়মিত গ্রহনের মাধ্যমে লবঙ্গের উপকারিতা সম্পূর্ণ রূপে পাওয়া সম্ভব।
এলাচির উপকারিতা
এলাচ সুগন্ধি যুক্ত একটি মসলা। এলাচকে বলা হয় মসলার রানী। খাবারে অতিরিক্ত স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয় এলাচ।এখানে এলাচ থেকে আপনি যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন তা তুলে ধরা হল।
১. এলাচ ও আদা সমগোত্রীয়। আদার মতোই পেটের নানা সমস্যা এবং হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে এলাচ অনেক কার্যকরী। বুক জ্বালাপোড়া, বমি ভাব, পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটির হাত থেকে মুক্তি পেতে এলাচ মুখে দিন।
২. দেহের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে দিতে এলাচের জুড়ি নেই। এলাচের ডিউরেটিক উপাদান দেহের ক্ষতিকর টক্সিন পরিষ্কারে সহায়তা করে।
৩. রক্তনালীতে রক্ত জমে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই।  এলাচের রক্ত পাতলা করার দারুণ গুনটি এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। প্রতিদিন এলাচ খেলে রক্তের ঘনত্ব সঠিক থাকে।
৪. এলাচের ডিউরেটিক উপাদান উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম। দেহের বাড়তি ফ্লুইড দূর করে এলাচ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে।
৫. মুখে খুব বেশি দুর্গন্ধ হয়? একটি এলাচ নিয়ে চুষতে থাকুন।  এলাচ মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
৬. নিয়মিত এলাচ খাওয়ার অভ্যাস মুখের দুর্গন্ধের পাশাপাশি মাড়ির ইনফেকশন, মুখের ফোঁড়াসহ দাঁত ও মাড়ির নানা সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
৭. গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এলাচ খাওয়ার অভ্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এলাচ দেহে ক্যান্সারের কোষ গঠনে বাঁধা প্রদান করে থাকে।
৮. এলাচের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকে বয়সের ছাপ, রিংকেল ইত্যাদি পড়তে বাঁধা প্রদান করে। এলাচ ত্বকের ক্ষতি পূরণেও বেশ সহায়ক।
এই মসলা খাবারে অতিরিক্ত স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হলেও রান্নার স্বাদ বাড়ানো ছাড়াও এর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপকারিতা যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে। আশা করি, এখন থেকে আপনারাও এ যথাযথ ব্যবহার করবেন।
দারুচিনির উপকারিতা
দারুচিনি এইগ্রহের সবচেয়ে বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভেষজ। এর মিষ্টি স্বাদ এবং সুন্দর সুবাস জন্য শতাব্দীর পর শতাব্দীর ধরে প্রায় প্রত্যেক সংস্কৃতির দ্বারা সম্মানিত হয়ে আসছে। দারুচিনিতে রক্তের শর্করার রোধক সহ উন্নত অসাধারণ ঔষধি গুণাবলী রয়েছে যা , প্রদাহ কমাতে এবং স্নায়বিক স্বাস্থ্য উন্নীত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও সুগন্ধি মসলা হিসাবে দারুচিনি ব্যপকভাবে পরিচিত ।
শুধু রান্নায় গন্ধ বৃদ্ধি নয়, শরীর ও ত্বক উভয়ের জন্যই দারুচিনির ব্যবহার করা যায়। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে । চলুন জেনে নেই দারুচিনি আমাদের শরীরের কি কি উপকারিতা সাধন করে থাকে।
১। অনেকেই জয়েন্টের সমস্যায় ভুগছেন। এক্ষেত্রে দারুচিনিকে জয়েন্টের ব্যথা কমানোর ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। উষ্ণ গরম পানির মধ্যে এক চামচ মধু আর দারচিনি গুড়ো ভালভাবে মিশিয়ে নিন, এরপর শরীরের ব্যথা স্থানে আস্তে আস্তে মালিশ করুন। ২-৩ দিন ভালভাবে মালিশ করুন। কিছুদিন পর দেখবেন ব্যথা কমে যাবে।
২। দারচিনি পেটের জন্য ভীষণ উপকারি। এটি অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করে ও পেটের ব্যথা উপশম করে। পেট পরিষ্কার করতে, রাতে শোবার আগে, দারুচিনির সঙ্গে হরীতকীর গুঁড়া মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এসিডিটি রোধ করতে, মধুর সাথে দারুচিনি মিশিয়ে খেলে এসিডিটি ভালো হয়ে যায়।
৩। প্রতিদিন আধা চা চামচ দারুচিনির গুড়ো রক্তে খারাপ কোলস্টেরল এলডিএল এর মাত্রা কমায়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিষন্ত্রণ করে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
৪। ঈস্ট ছত্রাক ঘটিত ইফেকশন প্রতিরোধ করতে দারুচিনির গুণাবলী চমৎকার ভাবে কাজ করে। হৃদরোগীদের জন্যেও দারুচিনি খুব উপকারী। এটি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে।
৫। দারুচিনি মারন ব্যাধি লিম্ফোসাইটিক লিউকোমিয়ার বিস্তার রোধ করে। রক্ত জমাট না বাঁধার অসুখ হিমোফিলিয়া প্রতিরোধ করতে দারুচিনি বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৬। বাতের ব্যথা ও শরীরের হাড়ের ব্যথায় আধা চামচ দারুচিনির গুড়ো এক চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে ব্যথা দূর হয়। তাছাড়া, দারুচিনি মিশ্রিত সরিষার তেল গায়ে মালিশ করলে ব্যথা ভালো হয়।
৭। ঠাণ্ডায় গলা ব্যথা বা খুশখুশে কাশিতে মধু চায়ের সাথে দারুচিনি মিশালে আরাম পাওয়া যায়।
৮। ত্বকের ঔজ্জ্বল্যতা বৃদ্ধিতে দারুচিনি, দূর্বাঘাস ও হলুদ সমপরিমানে বেটে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ভালো। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রন রোধ করতে দারুচিনি উপকারী।
৯। নিয়মিত দারুচিনি খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
১০। আর্থারাইটিসের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা এক কাপ গরম জলের মধ্যে দু চামচ মধু আর দারচিনি গুড়ো মিশিয়ে সকাল সন্ধ্যা খেতে পারেন।

No comments :